প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে ক্ষুদ্রঋণের নামে দারিদ্র্য লালন-পালন করা হয়েছে। আর যারা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করেছে, তারা ধনশালী ও সম্পদশালী হয়েছে। এ বিষয়টি যেন গবেষণা করে দেখা হয়।
শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব সম্পর্কিত আলোচনায় এ কথা বলেন।
দেশের দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংকসহ অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকের বছরে ১ শতাংশ করে দারিদ্র্য বিমোচন করার তথ্য অস্বাভাবিক। দেশে প্রায় আড়াই হাজারের মতো এনজিও রয়েছে, যারা ক্ষুদ্রঋণ দেয়। আবার কোনো কোনো বিশেষ ব্যাংকও ক্ষুদ্রঋণ দেয়। তারা ঋণ দিয়ে সুনামও অর্জন করেছে। কিন্তু দারিদ্র্যের হার কত শতাংশ হ্রাস পেয়েছে? কত মানুষ দারিদ্র্য থেকে বের হতে পেরেছে? এত এনজিও কী কাজ করল?
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংক নাকি প্রতিবছর ১ শতাংশ করে দারিদ্র্য হ্রাস করেছে। ব্র্যাক এ দেশে কাজ শুরু করে ১৯৭২ সালে, গ্রামীণ ব্যাংক ৮৫ সাল থেকে। এই দুই জায়গা থেকে যদি বছরে ১ শতাংশ করে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়ে থাকে, তাহলে এত দিনে বাংলাদেশে তো দারিদ্র্য থাকার কথা নয়। শূন্যের কোটায় চলে যাওয়ার কথা বহু আগেই। কিন্তু গেল না কেন? সেটাই আমার প্রশ্ন। দারিদ্র্য হ্রাসের এত গল্প শুনলাম, তাতে কত শতাংশ দারিদ্র্য হ্রাস হয়েছে? কোনো সরকারের আমলে কত শতাংশ দারিদ্র্য হ্রাস হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে।’
দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি, তখন ৫৭ শতাংশ দারিদ্র্য ছিল। ২০০৯ এসে ৪৭ শতাংশ পেয়েছি। আজকে ২২ ভাগে নামাতে পেরেছি। সরকারের প্রচেষ্টাতেই আট বছরে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।’
দেশে গরু চোরের গ্রাম আছে
দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনো এলাকায় ভিক্ষুক থাকতে পারবে না। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করে এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত করতে হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও কিছু এলাকা রয়েছে। এখানে নাম উল্লেখ করলে অনেকে কষ্ট পাবেন। যেমন একটা আছে চোর গ্রাম। তাদের পেশাই চুরি। দিনভর তারা ঘুমায় বা জুয়া খেলে, রাতভর চুরি করে। আবার আরেকটা আছে গরু চোরের গ্রাম। তারা গরু চুরি করে মাটিতে গর্ত করে তার ভেতরে রাখে। পরে সেখান থেকে বের করে নিয়ে বিক্রি করে। তাদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি।
উন্নয়ন না গণতন্ত্র চান
দেশে গণতন্ত্র নেই বলে উল্লেখ করে সরকারের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও কথা বলার স্বাধীনতা না থাকলে সরকারের বিরুদ্ধে এত সমালোচনা করেন কীভাবে? আমি বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিয়েছি বলেই তো কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। আমার সমালোচনার সুযোগ পাচ্ছেন। উন্নয়ন চান না গণতন্ত্র চান? গণতন্ত্র আছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। প্রতিটি কর্মকাণ্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করি। যে কারণে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ বলছেন, শুধু উন্নয়ন করলে হবে না, গণতন্ত্র লাগবে। আর এটা কাদের মুখে শুনি। শুনি সেই লোকদের মুখে, যারা জরুরি অবস্থার সরকারকে গণতান্ত্রিক মনে করে। তারা বিগলিত হয়ে জরুরি অবস্থার সরকারের পদলেহন করে। তাদের আকাঙ্ক্ষা একটি পতাকা পাবেন। এই যদি আকাঙ্ক্ষা হয়, তাহলে রাজনীতি করলে পারেন। এতে জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায়ও যেতে পারেন।
যে উপায়ই হোক, জঙ্গিবাদ দমন করবইজঙ্গিবাদের বিরুদ্ধ সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনোভাবেই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেব না। যে উপায়ই হোক, জঙ্গিবাদ দমন করবই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে বলেনি। আমাদের নবী করিমও (সা.) নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে বলেননি। কী অদ্ভুত একটা পরিবেশ বাংলাদেশে। তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, জঙ্গিবাদ এখন সারা বিশ্বের সমস্যা।
আরও পড়ুন:
বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে পাটকল বন্ধ করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী